ইতি ‘কনকাঞ্জলি’????

একই ১০০ : নিজস্ব প্রতিবেদন : ১0 ই ফাল্গুন ১৪৩২

নারী-পুরুষের মধ্যে হওয়া শাস্ত্রীয় বিধি ও পারিবারিক ঐতিহ্য গত প্রথা সম্মত পবি সামাজিক প্রিয় কে বিবাহ বলা হয়।আর এই বিবাহে কনকাঞ্জলি হলো কনে বিদায়ের অনুষ্ঠান,যা আনন্দ ও দুঃখের মিশ্র মুহূর্তের সাক্ষী। কারণ এই দিনে কনে তার মা -বাবা ও পরিজনের থেকে আশীর্বাদ নিয়ে বিদায় গ্রহণ করে এবং স্বামীর সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করে।রীতি অনুযায়ী উক্ত অনুষ্ঠানে নববধূ কে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা চাল তিন বার করে মায়ের আঁচলে ফেলতে হবে, এবং বললে হবে মা তোমার সব ঋণ শোধ করে দিলাম। এখানে নারী এবং চাল কে লক্ষী স্বরূপ বলা হয়।যে হেতু লক্ষী স্বরূপ মেয়ে বাপেরবাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে, তাই লক্ষী স্বরূপ চাল বাড়িতে দিয়ে যায়। কিন্তু তাতে কি জন্ম থেকে বিবাহ অব্ধি তিল তিল করে গড়ে তোলা ছোট্ট মেয়েটির হিসেব শেষ হয়ে গেল??

জীবনে সম্পদ আর সমৃদ্ধি আমরা সবাই চাই। সমৃদ্ধি কী ভাবে লাভ করা যায, তার পিছনে তথাকথিত প্রচলিত বিশ্বাস ও প্রথা রয়েছে। বিয়ের পর কনে বিদায়ের সময় কনকাঞ্জলি প্রথা সমৃদ্ধি কামনা করে পালন করা হয়ে থাকে । কিন্তু বৈদিক শাস্ত্রে নেই কনে সম্প্রদান, কনকাঞ্জলি।

বিবাহ অনুষ্ঠানের একটি শব্দ খুবই পরিচিত তা হলো ,'সম্প্রদান'।যার অর্থ স্বত্বত্যাগপূর্বক দান । অর্থাত্ ‍ তোমাকে আমি আমার সালংকারা কন্যা দান করলাম । এবার তাকে রক্ষনাবেক্ষণ ও পোষন করার দায়িত্ব স্বামীর। কিন্তু আজকের দিনে মেয়েরা কোন সম্পত্তি নয় যে স্বত্ব ত্যাগ করে তাকে অন্যের হাতে অর্পন করতে হবে। বরং পুরানের তথা বৈদিক যুগেও সয়ংম্বর প্রথা চালু ছিল। অর্থাত্ নারী কে তার পতি গ্রহণ বা বর্জনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী বৈদিক যুগে নিয়মের গেরোয় কবে যে কন্যা সন্তান দানের বস্তু হয়ে উঠেছে তার জানা নেই।

একবিংশ শিতাব্দীতে এসে আমারা যদি অন্য রকম ভাবি? বিবাহ পদ্ধতি যদি সম্পূর্ণ হয় বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদসহ সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ এর মধ্যে দিয়ে? পাশাপাশি মন্ত্রের মাঝে থাকবে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন। পেশাগত প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে দ্বারা , একটু একটু করে সমাজে নিজেদের জায়গা প্রতিষ্ঠা করেছে মেয়েরা, এমনকি বৈদিক শাস্ত্রে কনকাঞ্জলি প্রথার উদাহরণ কোথাও নেই। এই শতাব্দীতে যারা তাদের মেয়েকে ‘দান’ হিসেবে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে চান না, এত দিনের চলে আসা প্রথা ভেঙে বেরিয়ে আসতে চান, তাদের দিয়েই পরবর্তী প্রজন্মের ‘নব বিবাহ ‘ প্রথা চালু করা হবে, কন্যার বিদায় অনুষ্ঠান হবে হাসি মুখে,রবি ঠাকুরের কবিতা ও গান দিয়ে,এ যেন ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ ‘।

ওই এক মুষ্টি চাল দিয়ে মায়ের ঋন শোধ করা সম্ভব?.এটা তো সন্তানের এক বেলার ভাত ছিল, তাহলে একে দুই দিয়ে গুন করা, তার সাথে তিনশ পঁয়ষট্টি দিন ও চব্বিশ ঘণ্টার হিসাব, তার সঙ্গে লিপ ইযার আরো একস্ট্রা এক দিনের হিসাব? এত গেল চালের হিসাব, এবার আসা যাক জন্মের পর থেকে সন্তানের পড়াশোনার পিছনে যা খরচ হয়েছে তার হিসাব ? নিত্য নতুন জামা কাপড় কসষমটিক্স এর হিসাব?.. ন মাস সন্তানকে গর্ভে রাখার হিসেব? প্রসবের সময় যন্ত্রণার হিসাব ? তারপর মায়ের দুধের হিসাব? রাতের পর রাত জেগে থাকার হিসেব? সন্তানের বাড়ি ফিরতে দেরি হলে পাগলের মতো চিন্তার প্রতিটি মুহূতের হিসেব? এগুলোর পয়সা কনভার্ট করা যায কি?”

সারা পৃথিবীর সব সম্পদের মালিক যদি কেউ কোন দিন হয়, তবুও কোন কিছু দিয়েও মায়ের ঋণ চুকিয়ে দেওয়া যায় না । নিজের শেকড় উপড়ে না ফেলে, সম্পর্কের মূল্য এতটা ঠুনকো না করে, জীবন সঙ্গী নির্বাচন করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সকল কন্যা মধ্যে ফুটে উঠুক ‘আনন্দ বসন্ত সমারহে’।