পর্দা বলতে কোনো এক ধরনের পোশাক, কিংবা অন্তঃপুর চোখে ভেসে ওঠে না। পর্দাপ্রথা নিয়ে তর্কবিতর্কের শেষ নেই। ধর্ম, সম্প্রদায়, সমাজের বিবর্তন, আধুনিকতা—এমন জটিল, বিশদ সব আইডিয়া জড়িয়ে আছে পর্দাপ্রথার সঙ্গে। পর্দাপ্রথা ঠিক কবে, কীভাবে এ উপমহাদেশে চালু হয়েছিল তার কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ কিংবা বন্দোবস্তের কথা বলা সম্ভব নয়।আদতে মুসলিম শাসনের সূচনার অনেক আগে থেকেই অবগুণ্ঠন. ঘোমটার প্রচলন ছিল ভারতে। সংস্কৃত-প্রাকৃত সাহিত্যে এ অবগুণ্ঠনের উল্লেখ পাওয়া যায়। আর পর্দা বা অন্তঃপুর মূলত ছিল অভিজাত ঘরের নারীদের জন্য। সাধারণের জীবনে পর্দা মেনে চলা কঠিন ছিল। পর্দা ভারতীয় সংস্কৃতিতে মুসলিমদের আগমনের আগেই উপস্থিত ছিল। ভারতে নারীদের পর্দা বা অবরোধ প্রথাকে আনুষ্ঠানিক বা লিখিত রূপ দিয়েছিলেন অর্থশাস্ত্রের জনক কৌটিল্য বা চাণক্য। তিনি রাজপরিবারের নারীদের অন্তঃপুরে রাখার ব্যবস্থা চালু করার কথা লিখেছেন। এবং সে অন্তঃপুরের গঠন কেমন হবে তা-ও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বহু কক্ষবিশিষ্ট হারেম তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন, যেখানে একটি কামরা থাকবে আরেকটি কামরার মধ্যে।পৃথিবীর অনেক কিছুর সাথেই সময়ও বদলেছে। রাজনৈতিক হাতবদলের বিবর্তনে এখন হিজাব, নেকাব আর বোরকা ক্রমে ক্রমে রাজনৈতিক বাচনের হাতিয়ার। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে এই ‘পর্দা’ এমন কিছু মহিমায় উপস্থাপিত, যার নান্দনিকতাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।ইতিহাসবিদরা বলছেন, ইসলামের আবির্ভাবের বহু আগে থেকেই পর্দার ব্যবহার প্রচলিত ছিল মধ্যপ্রাচ্যে। মেসোপটেমিয়ার প্রাচীন সভ্যতায় ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ যে পর্দার প্রচলন ছিল, তা সেই সময়কার বেশকিছু প্রত্নমূর্তি থেকে জানা যায়। পরে ইহুদি, খ্রিস্টীয় ও ইসলাম— তিনটি সেমিটিক সমাজেই তার প্রচলন বহমান থাকে।অটোমান তুর্কিদের আমলে আভিজাত্য ও উচ্চ রুচিবোধের প্রতীক হিসেবে নেকাব, হিজাব ও বোরকার প্রচলন জনপ্রিয় হয়। ‘মুহাজিবা’-রা (হিজাব পরিহিতা নারী) থেকে যান এক দূর সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে। সুফিবাদ সেই নন্দনতত্ত্বকেই নিয়ে যায় আধ্যাত্মিক স্তরে।পর্দা কেবল সত্য আর বিভ্রমের মাঝখানের ব্যবধান হয়েই থাকেনি, সুফি কবিতায় এবং গানে তা ব্যঞ্জনা পেতে থাকে বিরহীর অন্তর্বেদনার আড়াল এবং একই সঙ্গে শুধু মাত্র পরমের সামনে নিজের অন্তরের সৌন্দর্যকে ব্যক্ত করার প্রতীক হিসেবে। নশ্বর মানুষ বাহুল্য, লোকসমাজ সেখানে গৌণ।
অপরদিকে, অশ্লীলতা মানে কুৎসিত, জঘন্য, অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও কদর্য রুচি। সাধারণভাবে বলা যায়, লজ্জাহীনতা, রুচিহীনতা, অসুন্দর, অশোভন এসবের সামষ্টিক রূপই হলো অশ্লীলতা।বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এই মিডিয়া ইন্টারনেট-ভিত্তিক প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে মানুষ একে অন্যের সাথে সহজে ও অল্প সময়ে যোগাযোগ বা তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। আমরা প্রায়ই ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, ইউটিউব, ইমু, ভাইবার, কোরো, রেডডিট, স্ন্যাপচ্যাটসহ অন্যান্য আরো বেশ কিছু সাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রকাশ করে থাকি। এর সবই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে পরিচিত।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভয়াবহ দিক হলো স্বদেশীয় সামাজিক আচরণের নীতিকে অবহেলা করে অশ্লীলতার বিস্তার। রাতারাতি তারকা খ্যাতি অর্জনে তরুণ প্রজন্ম এখন বেসামাল। এতে করে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে টিকটক ও বিগো লাইভ। এসব অ্যাপসের মাধ্যমে উদ্ভট সাজ, অঙ্গভঙ্গি এবং সহিংস ও কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট সমাজে অশ্লীলতার বিস্তার ঘটাচ্ছে। ভিনদেশী অপসংস্কৃতি অনুসরণ করে অশ্লীল পোশাকে নাচ, গান ও অভিনয়ের মাধ্যমেই তরুণ-তরুণীরা এতে নিজেদের তুলে ধরছে। অশ্লীলতার ছড়াছড়ি এসব ভিডিও তৈরিতে অনেকে আবার জীবনের ঝুঁঁকিও নিচ্ছে। অন্যের মনোযোগ আকর্ষণে এতে যুক্ত হয়েছে তারকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষ। তবে এর মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অশ্লীলতার আরেক ভয়ানক রূপ হচ্ছে ওয়েব সিরিজ। ওয়েব সিরিজগুলোতে কোনো সেন্সরের সুযোগ না থাকায় অবাধে খ্যাতিমান তারকারা অশ্লীলতার চর্চায় প্রতিনিয়ত সীমা লঙ্ঘন করছে। বাস্তব জীবনে অশ্লীলতার প্রভাবে তরুণ সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে এবং অসামাজিক ও যৌনাচারী অসভ্য মানসিকতার বিস্তার ঘটছে। শিশুদের মানসিক বিকাশ হচ্ছে বিকৃতভাবে।পাশ্চাত্যের ডিস কালচার আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ক্রমান্বয়ে অশ্লীলতার শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে। এরই কারণে আজকাল রাস্তা-ঘাটে, পার্কে-ময়দানে, হাটে-বাজারে একশ্রেণীর যুবক-যুবতীর উগ্র চালচলন দেখা যায়। তারা শর্টকাট পোশাক পরে ছুড়ে দিচ্ছে…